Header Ads

Header ADS

একি জেনে গেল সন্তান || The-same-known-child-child || News BD Zones

একি জেনে গেল সন্তান ||The-same-known-child-child || News BD Zones


১০ বছর বয়সের খুব শান্তশিষ্ট ছেলে সাফে (ছদ্মনাম) হঠাৎ করে অবাধ্য আর খিটখিটে হয়ে উঠল। চিন্তিত বাবা-মা। শুধু তাই না, পড়ালেখা, খেলাধুলা বা বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা, এমনকি খাওয়াদাওয়াও চোখে পড়ার মতো কমে গেছে। সমস্যাটা বোঝার জন্য তাকে একান্তে প্রশ্ন করে জানা গেল, কিছুদিন আগে বাবার মোবাইল ফোনের মেসেঞ্জারে দেখে ফেলে বাবার সঙ্গে অন্য নারীর অন্তরঙ্গ ছবি। ১০ বছরের সাফার সরল-সহজ পৃথিবী যেন মুহূর্তে জটিল হয়ে যায়।

সন্তানের জন্য বাবা বা মায়ের এ ধরনের ঘটনা তীব্র চাপদায়ক। একজন শিশু সুষ্ঠুভাবে বেড়ে উঠে বাবা-মায়ের যৌথ ভালোবাসার ছায়ায়। বাবা-মায়ের সম্পর্কের দৃঢ় বন্ধন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থা শিশুর মধ্যে এক গভীর নিরাপত্তা বোধ দেয় এবং তাকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে।

 কেমন প্রভাব পড়ে সন্তানের ওপর?

 অনিরাপত্তাবোধ হওয়া

সন্তানের ভালো থাকা যে বাবা-মায়ের সুসম্পর্কের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে—সেটার একরকম বোধ সন্তানের শৈশব অবস্থা থেকেই থাকে। বাবা-মা সম্পর্কে সন্তানের ধারণা সব সময় অনেক উঁচুতে থাকে। অনেক সময়ে এমন বিষয় বাচ্চারা ঠিকমতো গ্রহণ করতে না পারলে নানা রকম মানসিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে পরিবার জানুক বা না জানুক, প্রায় ৪০ শতাংশ বা এর চেয়ে বেশি বৈবাহিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই কারণে। যার পরোক্ষ প্রভাব পড়ে সন্তানের ওপর।

আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া

অনেক সময় বাবা-মায়ের এ ধরনের সম্পর্কে সন্তান মনে করে তার বাবা বা মায়ের ভালোবাসা বা সময় অন্য জায়গায় ব্যয় হচ্ছে। ফলে তার মধ্যে একধরনের অবহেলিত বা প্রত্যাখ্যাত বোধ তৈরি হতে পারে। আবার এমন ধারণাও তার মধ্যে হয়—সে যথেষ্ট ভালোবাসার যোগ্য না।

হীনম্মন্যতাবোধ

বাবা-মা শুধু সন্তানের অস্তিত্ব তা-ই নয়, ব্যক্তির নিজের সম্পর্কে ধারণা বা আত্মবিশ্বাস তৈরির অনেকখানি নির্ধারকও বটে! সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের হীনম্মন্যতা তৈরি করে, বাবা-মায়ের প্রতি অসম্মানবোধ তৈরি করে। এমনকি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বাবা-মায়ের ভালোবাসার সম্পর্কের যে দুর্বলতা ইঙ্গিত করে, তা পরোক্ষভাবে সন্তানের মধ্যে অনিরাপত্তাবোধ গড়ে তুলতে পারে।

সম্পর্কে অবিশ্বাস

যেকোনো সম্পর্ক, বিশেষত নারী-পুরুষ বা দাম্পত্য সম্পর্কে শিশুরা প্রাথমিক ধারণা পায় বাবা-মায়ের সম্পর্কের প্রকৃতি দেখে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সম্পর্কের এ ধরনের বিচ্যুতি সন্তানের মনে সম্পর্কের পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা, কমিটমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে অনিশ্চিত করে তুলে। বড় হওয়ার পর নিজের অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট বিশ্বাস স্থাপন করতে অপারগ হয়। এ ছাড়া বাবা-মা যেহেতু ‘রোল মডেল’, তাই তাদের যেকোনো আচরণের মতো এ ধরনের আচরণও সন্তানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে। সম্পর্কের এ ধরনের বিচ্যুতি একরকম বৈধতা পেয়ে যায়। ফলে একই ধরনের অবিশ্বস্ততা তারা তাদের নিজেদের দাম্পত্য জীবনেও করতে পারে। গবেষণায় এ রকম সংশ্লিষ্টতা ছেলেসন্তানের বেলায় বেশি দেখা গেছে।

মানসিক উপসর্গ

এ ক্ষেত্রে সন্তানের মধ্যে অনিরাপত্তাবোধ থেকে উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা তৈরি হতে পারে। নানাভাবে প্রকাশ পেতে পারে। যেমন পড়াশোনায় অমনোযোগিতা, খিটখিটে মেজাজ, মা-বাবার সঙ্গে অবাধ্যতা, বিছানায় প্রস্রাব করা, মাথাব্যথা, বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা কমে যাওয়া, নিজেকে গুটিয়ে ফেলা, খাওয়াদাওয়া কমিয়ে ফেলা, মাদকাসক্তি, খিঁচুনি বা কনভারশন ডিসঅর্ডার।

পরোক্ষ প্রভাব

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দাম্পত্যে অবিশ্বস্ততা থাকলে বাবা-মায়ের প্রতিদিনের বিবাদ, পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ, রাগ ইত্যাদির নেতিবাচক প্রভাব সন্তানের মানসিক গঠনের ওপর পড়ে। দাম্পত্যে অশান্তি সন্তানের আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক সম্পর্কে অদক্ষতা, বাবা-মায়ের প্রতি অশ্রদ্ধাবোধ, পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল করে দিতে পারে।

 কী করবেন?

 বাড়িয়ে দিন সাহায্যের হাত

এ ধরনের ঘটনা জেনে ফেললে সন্তানের মনের চাপ কমানোর জন্য তাকে তার আবেগ, রাগ, অভিমান ও অনিরাপত্তাবোধ নিয়ে কথা বলতে দিন। কোনো দ্বিমত থাকলেও প্রাথমিকভাবে সেটা প্রকাশ না করে তার কথা অখণ্ড মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

 নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করুন

যতই অস্বস্তিকারক হোক বিষয়টা নিয়ে আপনার অবস্থান ব্যাখ্যা করুন। যতটা সম্ভব সন্তানের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিন।

 সন্তানের আবেগ গ্রহণ করুন

সন্তানের রাগ, ঘৃণা গ্রহণ বা যে বাবা-মা এ ঘটনার শিকার তার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশকে মর্যাদা করুন। মনে রাখবেন, এ ক্ষেত্রে তার রাগ স্বাভাবিক।

সন্তানের নিরাপত্তাবোধকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন। এ রকম সম্পর্কে লিপ্ত বাবা বা মা যে-ই হন না কেন, সন্তানের সঙ্গে ভালোবাসা যে অক্ষুণ্ন আছে, সন্তানকে সেটা নিশ্চিত করুন। সন্তানের ভবিষ্যৎ সব ধরনের নিরাপত্তায় আপনার ভূমিকা আশ্বস্ত করুন, সন্তানের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় কাটান। এই নিশ্চয়তা তার আত্মবিশ্বাসের জন্য প্রয়োজন।

 যা করবেন না

বিষয়টা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এ ক্ষেত্রে সন্তানের মনে অসন্তোষ বেড়ে যায়।

নিজেদের সম্পর্কে যতই অবিশ্বস্ততা হোক, সন্তানের কাছে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে লিপ্ত বাবা-মাকে হেয় করে বা খারাপভাবে উপস্থাপন না করা

অপর পক্ষকে দোষারোপ না করা: নিজের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে বৈধতা দেওয়ার জন্য অন্যের ওপর অহেতুক দোষারোপ না করা। এতে সন্তান আরও দিশেহারা হয়ে যায়।

মেখলা সরকার
সহযোগী অধ্যাপক
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

No comments

Theme images by Petrovich9. Powered by Blogger.